গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ঘুষসহ ধরা খেয়েছিল অফিস সহায়ক দেবব্রত

ক্যাশিয়ার নিয়োগ দিয়ে ঘুষ আদায় করছে ফেনী বিআরটিএ পর্ব-১

Passenger Voice    |    ০৬:০৭ পিএম, ২০২২-০৯-২২


ক্যাশিয়ার নিয়োগ দিয়ে ঘুষ আদায় করছে ফেনী বিআরটিএ পর্ব-১

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ২০২০ সালের ১ মার্চ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বর্তমান চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গণশুনানিতে এসেছিলেন বিআরটিএর ফেনী সার্কেলে। সেই সময়ে তিনি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিআরটিএ সংস্থাপন শাখার অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। ফেনী শহরের শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এই গণশুনানিতে বিআরটিএর ফেনী সার্কেলের অফিস সহায়ক দেবব্রত চন্দ্র ভৌমিকের বিরুদ্ধে ডজন খানেক ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল গ্রাহকরা। সেই সময়ে গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন তৎকালিন ফেনী জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান, বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ফেনী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম জাকারিয়া, বিআরটিএ ফেনী সার্কেলের সহকারী পরিচালক পার্কন চৌধুরী, মোটরযান পরিদর্শক জমির উদ্দিনসহ পরিবহন সেক্টরের সকল স্টক হোল্ডারগণ।

তবে গণশুনানিতে সাধারণ গ্রাহকরা এমন অভিযোগ করলেও তেমন কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় এই সার্কেলে চাকরির সুবাদে ফেনী বিআরটিএর আনাগোনা করা দালাল চক্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন এই অফিস সহায়ক। কৌশলে ঘুষ বাণিজ্য করে কর্মকর্তাদের পকেট ভারী করায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না বলে অভিযোগ সাধারণ গ্রাহকদের। সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা প্রতিদিন নতুন নতুন হয়রানী শিকার হয় এই দেবব্রত ভৌমিকের কাছে। অভিযোগ জানাতে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর রুমে প্রবেশ করতে দেবব্রত ছাড়াও এই সার্কেলের অঘোষিত দুই ক্যাশিয়ারের টেবিল পার হয়ে যেতে হয়। তাই সহকারী পরিচালক এর কাছে অভিযোগ করাও সম্ভব হয়না। ফেনী বিআরটিএর সরকারী ওয়েবসাইডে http://brta.feni.gov.bd/ গিয়েও অফিস সহায়ক দেবব্রত চন্দ্র ভোমিক ব্যতিত আর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য মিলেনা। বাকী ২ জন কর্মচারীর তথ্য দেয়া থাকলেও তারা এই সার্কেল থেকে বদলী হয়ে গেছে অনেক আগে। মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশনের ফাইল জমা, রুট পারমিটের ফাইল জমা, ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় পাসের কন্ট্রাক, ফিটনেস প্রদানের ফাইল গ্রহন সব কাজ করেন এই দ্রেবব্রত।

আরো পড়ুন >>>>> জেলায় জেলায় ড্রাইভিং লাইসেন্সে ঘুষ বাণিজ্য, বহাল তবিয়তে বিআরটিএর মেহেদী

২০২১ সালে সরকারের এক জাতীয় পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার ফাইল আটকিয়ে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ ছিল ফেনী সার্কেলের এই অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে বিষয়টি বিআরটিএর তৎকালীন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পার্কন চৌধুরী, ও মোটরযান পরিদর্শক জমির হোসাইন এর সমন্বয়ে ওই গোয়েন্দা সংস্থার সাথে মিমাংসা হয় এবং ক্ষমা চেয়ে মুক্তিপায় অফিস সহায়ক দেবব্রত চন্দ্র ভৌমিক । তবুও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 

বিষয়টি জানতে ফেনী বিআরটিএর তৎকালীন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পার্কন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, দেবব্রত চন্দ্র ভৌমিক এর সাথে একটি ফাইল নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়েছিল ফেনী জেলাতে কর্মরত এক গোয়েন্দা সংস্থার অফিসারের সাথে। পরে আমরা সেটা মিমাংসা করে দিয়েছি।

প্যাসেঞ্জার ভয়েসের সাথে আলাপকালে একই মন্তব্য করেছেন এই সার্কেলের সাবেক মোটরযান পরিদর্শক জমির উদ্দিন ও সাবেক উচ্চমান সহকারী হারুনুর রশিদ।

এই দিকে ২০২০ সালে বিআরটিএর ফেনী সার্কেলের এক মেক্যানিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট এর সাথে ব্যাচেলর বাসায় থাকতেন আরিফুল ইসলাম। করতেন একটি বেসরকারী কোম্পানির সেইলসম্যানের চাকরী। করোনার মহামারিতে চাকরি চলে যাওয়ায় ওই মেক্যানিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট এর সাথে মাঝে মাঝে বিআরটিএর অফিসে আসা যাওয়া করতেন আরিফ নামে এই ব্যক্তি। পরবর্তীতে সখ্যতা বাড়ে বিআরটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাথে। তার গ্রামের বাড়ী নোয়াখালী জেলায় হওয়ায় বিআরটিএর সকল সদস্য কিছুটা বাড়তি আদর করা হতো তাকে। ফলে বর্তমানে বিআরটিএর ফেনী সার্কেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে ক্ষমতা ব্যবহার করছেন তিনি।  বিআরটিএর কোন পদে চাকরি না থকলেও সাবেক উচ্চমান সহকারী হারুনুর রশিদের চেয়ার টেবিল দখল করে দেদারসে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার পাস/ফেইলের রেজুলেশন, পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার কথা বলে সহকারী পরিচালক ও মোটরযান পরিদর্শকের নামে ঘুষ আদায় করছে প্রকাশ্যে। 

অন্যদিকে ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রদানেও ক্যাশিয়ার নিয়োগ করে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। বুলবুল আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তি ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রদানের দায়িত্বে থাকলেও ফেনী বিআরটিএতে লিমন নামের একজন ক্যাশিয়ার নিয়োগ দিয়ে রাখা হয়েছে।  ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগাতে আসা পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা লিমনের সাথে রফাদফা না করা পর্যন্ত ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগাতে নানান রকম অজুহাত দেখানো হয়।

তবে এই ঘুষ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ করতে কারো কোন ধরনের পদক্ষেপ নেই। ফেনী বিআরটিএর বেপরোয়া এই ক্যাশিয়াররা এখন সেবা গ্রহিতাদের গলার কাঁটা। 

পরবর্তী পর্বে পড়ুন ফেনী বিআরটিএর বিরুদ্ধে গ্রাহকের যত অভিযোগ। সারাদেশের বিআরটিএর অর্জিত সম্মান চেয়ারম্যানের নিজ জেলায় ম্লান।